Select Page

ওমর : রাজের পরিণত কাজ

ওমর : রাজের পরিণত কাজ

মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের পঞ্চম ছবি ‘ওমর‘। আগের ছবিগুলো ছিল – প্রজাপতি, তারকাঁটা, সম্রাট, যদি একদিন। নাটকে তার একটা অবস্থান ছিল। চলচ্চিত্রে এখনো পর্যন্ত ‘প্রজাপতি’ দিয়েই আলোচিত। নতুন ছবি ‘ওমর’ দিয়ে থ্রিলার গল্পে তার অভিষেক হলো।

‘ওমর’ যে থ্রিলার গল্পে নির্মিত হয়েছে এর দৈর্ঘ্য যতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে অত সময় লাগার কথা না ছবি শেষ হতে। কম সময়ের গল্পকে সানপেন্স ধরে রেখে সাইকোলজিক্যালি ডিল করা হয়েছে।

গল্প বিল্ডআপ করার জন্য পরিচালক রাজ যে ট্রিটমেন্ট যোগ করেছেন তাতে ছবির ফার্স্ট হাফ থেকে সেকেন্ড হাফ পর্যন্ত সাইকোলজিক্যাল যাত্রাটা বেশ পরিণত। রাজ অনেস্টলি স্বীকার করে নিয়েছেন বলিউডের সাম্প্রতিক সময়ের ওয়ান অফ দ্য বেস্ট মুভি ‘দৃশাম’ এর থেকে তার ছবিটি অনুপ্রাণিত। তার ছবির অভিনয়শিল্পীর মুখ থেকেই তথ্যটা জানানো হয়েছে। অনুপ্রাণিত হওয়া দোষের নয় কারণ এর থেকে উৎসাহিত হয়ে ভালো ছবি বানাতে পারলে সেটাও ভালো।

স্লো স্টোরি টেলিং থেকে গল্পের বিল্ডআপ করা হয়েছে ‘ওমর’-এ। কিছু দর্শক এতে বিরক্তিবোধ করলে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয় কিন্তু মাইন্ড গেমের বিষয়টা মাথায় রাখলে আস্তে আস্তেই গল্প বলতে হয়। রাজ এ কাজটি বেশ ভালোভাবে করতে পেরেছেন।

হাস্যরসের যোগান এ যাত্রায় ছবির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করেছে। ছবির ফার্স্ট হাফে স্ল্যাংকে হাস্যরসের প্রধান উপাদান করা হয়েছে কিন্তু যে ধরনের মানুষের মুখ থেকে স্ল্যাং ব্যবহার করা হয়েছে সেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক কারণ তারা সমাজে এভাবে পরস্পরের সাথে কথা বলে তাই এটা মেকি হয়নি, স্বাভাবিক ছিল। রাজ-নাসির উদ্দিনের স্ক্রিনটাইমে এর ব্যবহার ছিল বেশি।

ছবির ক্লাইমেক্সে রাজের নতুন রূপের বিষয়টি গল্পের ইউটার্ন ছিল। রাজ যে ছবির প্রধান আকর্ষণ ক্লাইমেক্সে প্রমাণিত।

নামভূমিকায় শরিফুল রাজ ছবির মূল আকর্ষণ। তার চোখ কথা বলে। কম সময়ের মধ্যেই ‘হাওয়া, পরাণ’ দিয়ে দর্শকের মধ্যে একজন উদীয়মান ভালো অভিনেতার ইমেজ ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে রাজ। ছবির শেষের দিকে সেলিম-রোজী দম্পতির কাছ থেকে বিদায় নেবার মুহূর্তে তার সাইলেন্ট অ্যাকটিংটা নোটিশ করলে বোঝা যায় তার অভিনয়ে গভীরতা রয়েছে। মাল্টিকাস্টিং ছবি হিসেবে অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী দম্পতির অভিনয় ছবিতে ইমোশনের কাজ করেছে ছেলেকে খোঁজার অংশ হিসেবে। নাসির উদ্দিনের অভিনয়ও এসময়ের একজন অন্যতম ভালো অভিনেতার প্রতিচ্ছবি। ফজলুর রহমান বাবু অল্প সময়েই অসাধারণ। আবু হুরায়রা তানভীরের স্ক্রিন টাইম অল্প হলেও তার ন্যাচারাল অভিনয় লক্ষণীয়।

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারে বিজিএম খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য। পরিচালক রাজ বিজিমের কাজ ভালো দেখিয়েছেন, পরিস্থিতিমতে ঠিকঠাক। গানের মধ্যে আরফিন রুমির ‘রব জানে’ নিঃসন্দেহে ছবির সেরা গান। আইটেম সং-এ দর্শনা বণিকের ‘ভাইরাল বেবি’ দারুণ।

পুরোদস্তুর নাচেগানে ভরপুর কমার্শিয়াল ছবির বাইরে গিয়ে অন্যভাবে দর্শকের কাছে পৌঁছানোর কাজ করতে চেয়েছেন মোস্তফা কামাল রাজ এবং ‘ওমর’ দিয়ে তা পেরেছেন। ‘প্রজাপতি’ দিয়ে তিনি আলোচিত ছিলেন তবে নির্মাণে ‘ওমর’ তার সেরা ছবি।

রেটিং – ৭.৫/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন