Select Page

সৈয়দ হারুনের সিনেমার গান এখনো শোনেন শ্রোতারা

সৈয়দ হারুনের সিনেমার গান এখনো শোনেন শ্রোতারা

সৈয়দ হারুন ‘চরম আঘাত’ সিনেমার প্রধান জুটি ইলিয়াস কাঞ্চন ও দিতিকে তার পরিচালনা-জীবনে প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরেন …

১৯৯৪ সালে সিনেমার একটা গান খুব হিট হয়ে যায়, ‘ভালোবাসা যতো বড় জীবন ততো বড় নয়’। সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গানের স্বীকৃতি পেতে গানটার বেশিদিন লাগেনি। বাংলাদেশে এমন কোনো শ্রোতা নেই যিনি গানটা পছন্দ করেন না বা কখনো গানটা শোনেননি। গানটার ছবির নাম যে ‘চরম আঘাত’ এটা সিনেমাপ্রেমীরা ছাড়া কম লোকই জানেন।

সৈয়দ হারুন পরিচালিত চার সিনেমা অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি জুটি

‘চরম আঘাত’ বাম্পারহিট কোনো ছবি নয়। সাধারণ মানের একটা হিট ছবি। কিন্তু এ ছবি থেকে একটা মজার ব্যাপার ঘটতে শুরু করে যা খুব কম দেখা যায়। ‘চরম আঘাত’-এর পরিচালক সৈয়দ হারুন এ ছবির প্রধান জুটি ইলিয়াস কাঞ্চন ও দিতিকে তার পরিচালনা-জীবনে প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরেন। তিনি আঁকড়ে ধরেন ‘চরম আঘাত’-এর দুর্দান্ত টিমওয়ার্ককেও।

‘চরম আঘাত’-এর গানগুলো সুর করেন আলাউদ্দিন আলী। গান লেখেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। গানগুলোতে কণ্ঠ দেন ভারতের জনপ্রিয় শিল্পীরা। কুমার শানু ও মিতালী মুখার্জিকে ‘চরম আঘাত’ থেকেই পছন্দ করতে শুরু করেন এদেশের শ্রোতারা।

সৈয়দ হারুন ১৯৯৬ সালে মুক্তি দেন তার দ্বিতীয় ছবি ‘আত্মত্যাগ’। যথারীতি এ ছবিতেও শানু ও মিতালীর একটা গান জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়, ‘এ জীবন তোমাকে দিলাম ও বন্ধু’। এ ছবিতে দিতির জায়গায় আসেন মৌসুমী। কাঞ্চন তো ছিলেনই। সুরকার, গীতিকারের জায়গাও অপরিবর্তিত, আলাউদ্দিন আলী ও মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান।

বেঈমানী চলচ্চিত্রের দৃশ্যে হুমায়ূন ফরীদি ও দিতি

আগের দুই ছবির সফলতায় সৈয়দ হারুনের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ১৯৯৭ সালে তিনি দুটো ছবি নির্মাণ করেন, ‘বেঈমানী’ ও ‘বাঁচার লড়াই’। দুটো ছবিরই নায়ক কাঞ্চন ও নায়িকা দিতি। ‘বাঁচার লড়াই’য়ে শানু ও মিতালী আবারো জুটিবদ্ধ, তাদের অমৃতকণ্ঠে বের হয়- ‘ভালোবাসার স্বাদ পূর্ণ তো হয় না কারো কোনোদিন’। আর ‘বেঈমানী’ ছবির গানগুলো হয়ে পড়ে চরম শ্রোতাপ্রিয়’। ‘আমি ভালোবাসার সুখে মরে যেতে চাই’ এবং ‘আজ বড় সুখে দুটি চোখে জল এসে যায়’ গান দুটি শ্রোতাদের কানে চিরদিনের জন্য গেঁথে যায়। এন্ড্রু কিশোর ও কনকচাঁপা ভারতীয় জুটির চেয়ে কিছু কম সাফল্য দেখান না। বলাই বাহুল্য, আলাউদ্দিন আলী ও মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানই গানের দায়িত্বে ছিলেন।

সৈয়দ হারুনের শেষ কীর্তি ‘অচল পয়সা’। ছবিটা তেমন চলেনি কিন্তু কাঞ্চন-দিতি জুটির যাদু, আলাউদ্দিন-রফিক জুটির মন্ত্র তখনো সজীব, সতেজ। এ ছবির গানগুলোও শ্রোতাদের নিরাশ করেনি। ‘অচল পয়সা’ মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৯৮ সালে।

ততদিনে ইলিয়াস কাঞ্চন যুগের শেষ। শেষ মেলোডিয়াস গানের যুগ। রফিকউজ্জামানদের চিত্রনাট্য লেখার যুগ শেষ। শেষ রুচিশীলতার যুগও । এই নিভু নিভু সময়ে একজন পরিচালক একটা টিমওয়ার্ক ধরে রেখে যেভাবে পর পর পাঁচটা ছবি বানিয়ে গেলেন, দর্শকরা সেসব ছবিকে লুফেও নিলেন, এমন ঘটনা কেবল সিনেমার সোনালি যুগেই ঘটতো।

আজকের সিনেমায় এমন দৃষ্টান্ত নেই। অনেক বড় নির্মাতা ছিলেন না সৈয়দ হারুন। তারপরও তিনি তার কাজ দিয়ে নিজেকে আলাদা করে রেখেছেন। নিজের একাটা স্বাক্ষর ঠিক রেখে গেছেন। আজ এমনটা দেখাই যায় না।

এদেশের সিনেমার প্রতি লাখো দর্শক যে প্রবল আকর্ষণ অনুভব করেন, তার পেছনে সিনেমার এইসব ছোট ছোট দিকগুলোর অনেক অবদান। দর্শক তার মনের অজান্তে ‘চরম আঘাত’ ছবির ই্উনিটের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কে জুড়ে গিয়েছিলেন। এমনইভাবে সিনেমার সঙ্গে দর্শকরা জুড়ে যেতেন সেই সময়ে।

এখনো রাত বাড়লে হাজারো শ্রোতা সৈয়দ হারুনের ছবির গানে কান পাতেন। পরিচালকের নাম ভুলে গেছেন। ছবির নাম ভুলে গেছেন। গানগুলো তরতাজা হয়ে আজো শ্রোতাদের কানে সুধা ঢেলে যায়।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মাহফুজুর রহমান

চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন