Select Page

ঈদ-উল-ফিতর ২০২২: সেরা দশ নাটক

ঈদ-উল-ফিতর ২০২২: সেরা দশ নাটক

ঈদের নাটক দেখা শৈশব থেকেই দেখার আগ্রহ, এখনো আছে। এই ঈদেও প্রচার হয়েছে প্রচুর নাটক, তবে মানে কমেছে। আলোচনাও কম, অন্যদিকে কিছু চাকচিক্যময় স্থুল কাজ ইউটিউব ভিউতে এগিয়ে আছে। তাই একজন নাট্যপ্রেমী দর্শক হিসেবে খারাপ লেগেছে। এই ঈদে আমার দেখা অন্যতম সেরা দশ নাটক—

১.সাদা প্রাইভেট: মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। সদ্য প্রোমোশন পাওয়ায় অফিস থেকে বলা হয় গাড়ি দেবে, এই নিয়ে পরিবারের কর্তা বেশ উচ্ছ্বসিত। এতটাই যে গাড়ি পাবার আগেই ড্রাইভার পর্যন্ত রেখে দেন। শেষ পর্যন্ত গাড়ি পাওয়ার আশা, প্রত্যাশা আর অভিমান নিয়ে দারুণ একটি টেলিফিল্ম। বঙ্গ ববের আয়োজনে ইশতিয়াক আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন আশিকুর রহমান। অভিনেতা হিসেবে তারিক আনাম খান এখন অনন্য উচ্চতায়, উনাকে নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। চমকে গেছি জিয়াউল হক পলাশের অভিনয়ে, ফারহানা মিঠু, চমক, মৌসুমী হামিদ এমনকি পরিবারের বাইরে আরেকটি চরিত্র ইরফান সাজ্জাদ অন্যরকম প্রভাব ফেলেছে। সব মিলিয়ে এটিই এই ঈদের সেরা কাজ মনে হয়েছে।

লিংক: https://www.bongobd.com/bn/watch?v=YYpDmDIigFU

২.কমলা রঙের রোদ ২: গত বছর ভালোবাসা দিবসে শিহাব শাহীন নির্মাণ করেছিলেন ‘কমলা রঙের রোদ’। এক চিকিৎসক দম্পতির সন্তান না হওয়ার জটিলতা নিয়ে এই নাটকটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। এটির সিক্যুয়েল এই নাটক। এই পর্বে দেখা যায়, তাদের জীবনেও সন্তান আগমনের সুখবর আসে, তারপরের পরিবেশ, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অতঃপর শুভ সমাপ্তি নিয়ে বেশ পরিপাঠী করে সাজানো হয়েছে। মূল চরিত্রে তাসনিয়া ফারিণ ও তাহসানের অভিনয় বেশ ভালো লেগেছে, দুজনকে বেশ মানিয়েছে। সুন্দর গল্পটির নাট্যকার ডা. জাহান সুলতানা।

৩.একটা নির্জন দুপুর চাই: এক বেকার ছেলে, চাকরি খুঁজছে। তীব্র হতাশার মাঝেও নিয়ম করে মোবাইলে এক অপরিচিত মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে, যার পুরোটাই মিথ্যা। তবুও শব্দচয়ন আর সংলাপ প্রক্ষেপনে এই মিথ্যাকথাগুলো যেন কাব্যিক হয়ে উঠে। চিরচেনা গল্প বলেও ভালো চিত্রনাট্য ও পরিচালনার কারণে মুগ্ধতা এনে দেয়। পাভেলের রচনায় এই নাটকের নির্মাতা সৈয়দ শাকিল। তাসনিয়া ফারিণের স্নিগ্ধতা, প্রাণ রায়ের উপস্থিতি, গান, আবহ সংগীত আর অপূর্বের পরিশীলিত অভিনয় পূর্ণতা এনে দিয়েছে।

৪.প্রায়শ্চিত্ত: ওবায়েদ হকের গল্প নিয়ে প্রথম টিভি ফিকশন বানিয়েছেন ভিকি জাহেদ। এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর গল্প, যার এক সময় কেটেছে অভাব, অবহেলা, অনাহারে। কিন্তু আজকের এই পর্যায়ে এসে জানতে পারেন তার কারণেই বিরাট ক্ষতি হয়ে গিয়েছে এক পরিবারের, জন্ম নেয় অপরাধবোধ, এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। বঙ্গ ববের আয়োজনে ভিকি জাহেদ বেশ ভালো চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন, মূল চরিত্রে আফরান নিশোর অভিনয় এতটাই ভালো করেছেন যে, সেরা অভিনেতা হিসেবে অনেকখানি এগিয়ে আছেন এই ঈদে। বিশেষ করে অভাবের দিনগুলোতে তার অভিনয় মন ছুঁয়ে গিয়েছে।

লিংক: https://www.bongobd.com/bn/watch?v=fGGZbtipjYH

৫.শুরুটাই সুন্দর: ‌‘জীবনে আসা সহজ, থেকে যাওয়া কঠিন’। আজকাল বিয়ের যে চাকচিক্য, সেটাই যে বিয়ের আনন্দে চাপ হয়ে দাঁড়ায়। সেটাই দেখিয়েছে নির্মাতা, বরং সাধারণভাবে সুন্দর সম্পর্ক নিয়ে একসাথে থাকাটাই বড় কথা। এই ঈদে মিজানুর রহমান আরিয়ানের একমাত্র নাটক। তৌসিফ মাহবুব ও তাসনিয়া ফারিণের সাবলীল অভিনয় শেষে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় ও সংলাপগুলো মনে গেঁথে আছে।

৬.প্রশ্রয়: জীবনে যখন দুঃখ, হতাশা ঝেঁকে বসে, বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন কারো কারো জীবনে এমন একটি মানুষ আসে, যে অন্যভাবে বাঁচতে শেখায়। গল্পে জোভানের চরিত্রটি এমনই, মেহজাবীন আর তার অসুস্থ মেয়ের জীবনে নিয়ে আসে একরাশ আলো, অথচ জোভান নিজেও অসুস্থ। রুম্মান রশীদ খানের রচনায় রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনা নাটকটি ভালো লেগেছে। মেহজাবীনের অভিনয়ের পাশাপাশি জোভানের পরিশীলিত অভিনয় মুগ্ধ করেছে, শিশু শিল্পী এমেলিয়াও দারুণ।

৭.ঘুণ: ভিকি জাহেদের নাটক। সম্পর্কের মাঝে সন্দেহ প্রবণাতা নিয়ে থ্রিলার এই গল্প। অতি বিশ্বাস কিংবা সন্দেহ প্রবণতা যে মানুষের মনে তীব্র হতাশায় এনে দেয়, তার প্রতিক্রিয়া এই নাটক। প্রধান চরিত্রে মেহজাবীন নিজের অভিনয় প্রতিভা আরেকবার দেখালেন, বলাই যায় তিনি সেরা অভিনেত্রী। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন খায়রুল বাসার ও নাজিবা বাশার। শেষটা রহস্যে মোড়ানো, যার কারণে আভাস মিললো সিক্যুয়েলের।

৮.নিঃশব্দের আলো: শব্দহীন পৃথিবীর রূপ দেখিয়েছেন শিহাব শাহীন। গল্পে অপূর্ব শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী। তার জীবনে বাবা-মায়ের ভালোবাসা, জটিলতা, জীবনসঙ্গীর আগমন নিয়ে সাজানো নাটকটি ভালো লেগেছে। আরো ভালো লেগেছে এই চরিত্রকে ধারণ করার জন্য যে চেষ্টা করেছেন অপূর্ব, বলা যায় তিনি সফল। অন্যান্য চরিত্রে আছেন সাবিলা নূর, রোজী সেলিম ও সমু চৌধুরী।

৯.ভাঙা পুতুল: শিশু ধর্ষণ নিয়ে নাটক। ডা. জাহান সুলতানার কাহিনীতে এই নাটকে ফুটে উঠেছে গ্রামের প্রভাবশালী দুশ্চরিত্র ছেলে কীভাবে এক গরীব শিশু মেয়েকে ধর্ষণ করে ধামাচাপা দিতে চায়। কিন্তু এগিয়ে আসে, ওই মেয়ের চিকিৎসক। শেষটা সিনেমাটিক হলেও শিহাব শাহীন বেশ ভালো চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন। চিকিৎসকের চরিত্রে আফরান নিশো বেশ, তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর চরিত্রে ছিলেন তাসনিয়া ফারিণ।

১০.সাইলেন্স: তৌসিফ মাহবুব ও তানজিন তিশা সদ্য বিবাহিত দম্পতি, দুজনই চাকরিজীবী। এক সন্ধ্যায় চাকরি থেকে ফেরার সময় দুর্বত্তরা তৌসিফকে আহত করে, তানজিন তিশাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এই ঘটনা সমাজে সম্মানের ভয়ে চাপা দিতে চায় তৌসিফের মা সাবেরী আলম। কিন্তু শেষটা ঘটে অন্যভাবে। সিনেমাটিক সমাপ্তি মনে হলেও রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় এই নাটকের চিত্রনাট্য বেশ ভালো ছিল। এই ঈদে তৌসিফ মাহবুবের জন্য বিশেষ হয়ে থাকবে, যেকোনো চরিত্রে মিশে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টার জন্য, তানজিন তিশাও যথাযথ। অন্যদিকে চিরাচরিত থেকে বেরিয়ে বিপরীতধর্মী চরিত্রে দারুণ করেছেন সাবেরী আলম।

বিশেষ- ‘সুশীল ফেমেলি বৃন্দাবন দাসের রচনায় অনেকদিন পর কোনো নাটক ভালো লাগলো। দুই ভাইয়ের দ্বন্ধ নিয়ে নাটকের শেষটা অন্যরকম। দীপু হাজরা পরিচালনায় বৃন্দাবন ছাড়াও অভিনয় করেছে শাহনাজ খুশি, চঞ্চল চৌধুরী, গোলাম ফরিদা ছন্দা, দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি। এ ছাড়া ভিকি জাহেদের ‘চোখ’-এর গল্প বেশ অভিনব, ভালো অভিনয় করেছে তানজিন তিশা।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন