Select Page

বাস্তব, চেনা ও বিশ্বাসযোগ্য ‘পেয়ারার সুবাস’

বাস্তব, চেনা ও বিশ্বাসযোগ্য ‘পেয়ারার সুবাস’

একটি নান্দনিক সিনেমা হিসেবে ‘পেয়ারার সুবাস’ ঠিক কতোখানি সুবাস ছড়িয়েছে সেটা নিয়ে বলা বা লেখার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারিনি। তবে অতি সাধারণ দর্শক হিসেবে এটুকু বলতে পারি ‘পেয়ারার সুবাস’ আমাদের চলচ্চিত্রে একটি ভিন্নধর্মী নির্মাণ এবং পাওয়ারফুল পারফরম্যান্সের সংমিশ্রণ ঘটিয়াছে বেশ ভালোভাবেই। 

অনেক আগেই এই সিনেমার শ্যুটিং সম্পন্ন হলেও রিলিজ পেতে বেশ খানিকটা সময় নিয়েছে। তবে সেই হিসাবমতে সিনেমার গল্প কিন্তু আবেদন ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এই ২০২৪ সালে এসেও। সোজা, সরল মনস্তাত্ত্বিক গল্প হলেও ‘পেয়ারার সুবাস’-এর মেকিং নির্মাতা নুরুল আলম আতিকের নামের সাথে জাস্টিস করেছে। যদি ভুল না করি এটি নির্মাতা হিসেবে তার প্রথম সিনেমা যদিও রিলিজের দিক থেকে প্রথম  না। তবুও কিছু কিছু দৃশ্যে এবং ফ্রেমিং সাথে অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর আমাদের মনোমুগ্ধকর এক অনুভূতি এনে দেয়। আরোপিত শব্দটা থেকে দূরত্ব রেখেই এই এই সিনেমার সবকিছুই খুব বাস্তব, চেনা এবং বিশ্বাসযোগ্য। আলাদাভাবে প্রশংসা করতে হবে কস্টিউম এবং আর্ট ডিপার্টমেন্টের। রিয়েল লোকেশনে শ্যুটিং হলেও প্রতিটা দৃশ্যেই গল্প এবং চিত্রনাট্যের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।

অভিনয়ে মুন্সী চরিত্রে তারিক আনাম খান অনবদ্য। আমাদের দেশে বয়সের কথা চিন্তা করে শিল্পীদের নিয়ে সেভাবে ভাবা হয় না, সেই জায়গা থেকে তারিক আনাম খানের ক্যারেক্টারটি নিঃসন্দেহে ভালো একটি সূচনা। নূর ইমরান মিঠু শক্তিশালী একজন অভিনেতা, তবে এই সিনেমায় তিনি সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। সুষমা সরকার যতোটুকু সময় পেয়েছেন নিজের সেরাটাই দিয়েছেন। সিনেমায় হিন্দু একজন কাজের মহিলার চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তার নামটা আমি জানিনা। তবে তিনি স্ক্রিনে যতোসময় ছিলেন নিজের ক্যারেক্টরটি অসাধারণ ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন।

সদ্য প্রয়াত অভিনেতা আহমেদ রুবেল এই সিনেমায় হাজির হন বেশ কিছুটা সময় পরে, তবে তিনি আলাদা ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছেন একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার বডি ল্যাংগুয়েজ, সেই আইকনিক ভরাট কণ্ঠের ডায়লগ ডেলিভারি চোখে এবং কানে আরাম এনে দিয়েছে। ছোট চরিত্রে জয়িতা মহলানবিশ এর মতো দক্ষ অভিনেত্রীও ছাপ রেখেছেন তেমন গুরুত্ব না পেলেও। হয়তো একজন শক্তিশালী অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে এটাও স্বাভাবিক যে, পর্দায় তার উপস্থিতি দৃশ্যগুলোকে আলাদা মাত্রা এনে দেয় খুব সহজেই।

এই অভিনয় ডিপার্টমেন্টে সবার থেকে অনেকখানি এগিয়ে থাকবেন দেশের অন্যতম সুঅভিনেত্রী জয়া আহসান। পেয়ারা চরিত্রে অসাধারণ সুন্দর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে পুরোটা সময় স্ক্রিনে অভিনেত্রী হিসেবে নিজের জাত নতুন করে জানান দিলেন দুই বাংলার এই গুণী অভিনেত্রী। যে সময়টায় এই সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে সেই সময়কাল হিসেবে জয়া আহসানের এমন দুর্দান্ত স্ক্রিন প্রেজেন্স নিয়ে যাই লেখা হোক বা বলা হোক সেটাই কম হয়ে যাবে। তার বডি ল্যাংগুয়েজ, চোখ মুখের অভিব্যক্তি এবং অভিনয় সব মিলিয়ে স্ক্রিনে এ যেন এক অন্য জয়া।

নুরুল আলম আতিক একটি সরল গল্পকে বাস্তবতা এবং ভিন্ন ভিন্ন মানুষের দৃষ্টিকোন থেকে দেখানোর চেস্টা করেছেন। অসম বয়সী দুই মানুষের বিয়ে, স্বামীর আগের ঘরের যুবতী মেয়ে, বাসার কিছু কাজের লোকজন বা হঠাৎ আগমন ঘটানো এক আগন্তুক। এসব কিছুর সাথে প্রকৃতির ভিন্ন ধরনের রূপ আবার বন্যায় সাধারণ মানুষের বিপর্যস্ত জীবন যাপন অনেক কিছুই উঠে এসেছে এই সিনেমায়। তবে স্ক্রিনটাইম আরো একটু বাড়ানো যেতো সাথে কিছু ক্যারেক্টরের পরিনণতি সম্পর্কেও হয়তো লক্ষ্য রাখা যেতো, যা সিনেমাটিকে আরো মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সহযোগিতা করতো বলে মনে হয়েছে।

নূরুল আলম আতিক আগেই জানিয়েছিলেন- “বাঙালির বৈবাহিক যৌনজীবনে পুরুষের আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার গল্প ‘পেয়ারার সুবাস’।” সেই আধিপত্যর কারণে একজন তরুণীর শারীরিক এবং মানসিক বিপর্যয়ের গল্পও উঠে এসেছে এই সিনেমায়। প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মেলবন্ধন না ঘটলেও সবমিলিয়ে বোদ্ধা বিনোদন প্রেমীদের কাছে ‘পেয়ারার সুবাস’ একটি ভিন্নধর্মী সুবাস নিয়েই এসেছে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আফজালুর ফেরদৌস রুমন

শখের বশে চলচ্চিত্র ও নাটক নিয়ে লিখি

মন্তব্য করুন