Select Page

মাহি কি জ্বলে উঠার আগেই নিভে গেল?

মাহি কি জ্বলে উঠার আগেই নিভে গেল?

ক্যারিয়ার শুরু থেকেই যে বলতে হয়

২০১২

এই বৎসরেই মাহির অভিষেক সিনেমা “ভালবাসার রঙ” মুক্তি পায় এবং দর্শকের কাছে এতোটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে প্রযোজক শীশ মনোয়ার বলেছিল “সিনেমাটির আয় বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না কে ছাড়িয়ে গেছে”, যে সিনেমাকে দেশের সর্বচ্চ আয়ের সিনেমা বলা হয়। আসলে মাথামোটা লোক ছাড়া এমনটা বলা সম্ভব না, এমনটাই ভাবি আমরা কিন্তু প্রযোজক কি বোঝাতে চেয়েছিল? বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। ওইসময় একটা টিকিটের দাম কতই বা ছিল? ভালবাসার রঙ বক্স অফিসে রেকর্ড গড়ার কারন ছিল ‘সিনেমাটির প্রথম দিনেই আয় ছিল ২৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫৭৫ টাকা’। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী একদিনে এত টাকা বক্স অফিসে তুলার ইতিহাসে ভালবাসার রঙই প্রথম। যাই হোক, ২০০০ সনের আগের টাকার মান আর গত পাঁচ বছর আগের মান আকাশ পাতাল পার্থক্য তাই এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভাল।

২০১৩

মাহির ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ সাফল্য এসেছিল এ বছরে। চারটা সিনেমা মুক্তি পায়, চারটাই সফল এবং পরপর তিনটা সিনেমা বক্সঅফিস কাঁপিয়ে ব্লকবাস্টার হিট হয়। ওই বৎসর অন্য কোন অভিনেত্রীর এতটা সফলতা ছিল বলে আমার জানা নেই এবং এই বৎসর থেকেই পরিচালক, প্রযোজক, দর্শকের চোখে মাহি নাম্বার ওয়ান, যা আজও রয়েছে!

২০১৪

আমরা সবাই জানি শাকিবের সাথে মাহির তুলনা যায়না, কারন একজন অভিনেতা, আরেকজন অভিনেত্রী। তারপরেও দিতে বাধ্য হই, কিন্তু কেন দেই?
আসুন খোলাসা হই–
তার আগে দেখে নেই ১৪ সালের প্রথম দশ ব্যবসাসফল সিনেমা____

আমি শুধু চেয়েছি তোমায়, 
হিরো দ্য সুপারস্টার সুপারস্টার,
হিটম্যান,
রাজত্ব,
ডেয়ারিং লাভার,
অগ্নি,
অনেক সাধের ময়না,
কি দারুন দেখতে,
মোষ্ট ওয়েলকাম ২ এবং 
কিস্তিমাত।

অর্থাৎ শাকিবের চারটা, মাহির তিনটা, জলিলের একটা, অঙ্কুশের একটা, শুভর একটা সিনেমা। কি বুঝলাম? শাকিবের সাথে পাল্লা দেয়ার মত শক্ত কোন অভিনেতা ছিলনা এখানে, ছিল একজন অভিনেত্রী, মাহি। এরপর আর নিশ্চয় প্রশ্ন করবেন না যে “শাকিবের সাথে মাহির তুলনা কেম্নে হয়?”

আর এখানে মাহির হিরোর নাম না বলে তার নাম বললাম, কারন মাহীর যে তিন সিনেমা (অগ্নি, ময়না, কি দারুন) আছে, তিনটিই নায়িকা প্রধান সিনেমা।

২০১৫

জাজের প্রথম প্রযোজনা/প্রতারনা – রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট – দুই বাংলার এই সফল সিনেমা দিয়েই সে বছর যাত্রা শুরু। এ সিনেমা দিয়ে কোলকাতায় মাহি গুছিয়ে নেয় বিশাল ভক্তকূল। মাঝখানে দুই সিনেমা, অবশেষে ঈদে এসে মুক্তি পায় সম্পন্ন মাহিকেন্দ্রিক সিনেমা ‘অগ্নি ২‘। এখানেও শাকিব বনাম মাহি। ঈদের সিনেমায় শাকিবের সাথে পাল্লা দেওয়া বর্তমানে দেশের কোন নায়কের দ্বারাও সম্ভব না, কিন্তু মাহী দিয়েছিলেন। “এক যুগের পুরোনো সুপারস্টারের সাথে নিজ যোগ্যতায় পাল্লা দিয়ে অতঃপর সেই সিনেমায় রেকর্ডস গড়া” – ঢালিউডের ইতিহাসে কতজন অভিনেত্রী এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন? আমার ঠিক জানা নেই।

২০১৬

কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, আবেগ, ছেলেমানুষি আর ষড়যন্ত্র সবমিলিয়ে কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিলেন মাহি? কিন্তু না! এক পরী মনি ব্যতীত গতবছর দেশের কোন অভিনেত্রীরই দুইটির বেশি সিনেমা মুক্তি পায়নি। মাহীরও ঠিক তাই। তাই বলা যায় মাহিও পিছিয়ে ছিলনা।গতবছর মাহির কৃষ্ণপক্ষঅনেক দামে কেনা দুটি সিনেমাতে ব্যতিক্রম অভিনয়। একটিতে অন্ধ মেয়ে ফুল বিক্রেতা পুষ্প, আরেকটিতে হুমায়ুনের স্বপ্নে আকা অরু। একটি আর্টফিল্ম, আরেকটি বাণিজ্যিক। সিনেমা দুটিতে নায়িকা হিসাবে মাহির যতটা অভিনয়ের সুযোগ ছিল অন্যকোন অভিনেত্রীর ছিল না, সেদিক থেকে মাহি এগিয়ে। ব্যতিক্রম, ব্যতিক্রম অভিনয়ে সিনেমা দুটির জন্য মাহী দেশ বিদেশে যতটা প্রশংসিত হয়েছিল, অন্য কেউ ততটা হয়নি, সেদিক থেকে মাহি এগিয়ে।

তবে কিভাবে মাহি পিছিয়ে? হ্যা, খুব একটা পিছিয়ে না থাকলেও পিছিয়ে মাহি। সেটা ব্যবসায়ীক দিক থেকে!

কারন মাহির যে দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, দুটি সিনেমাই ছিল জাজের মালিকানাধীন। তারা কখনই চায়নি বছর শেষে মাহি সেরা হোক, কিছুদিন আগে প্রথম আলোর মাহিকে নিয়ে নেগেটিভ লেখাটি শেয়ার দিয়ে তা প্রমাণ করেছেন জাজ মাল্টিমিডিয়া। অনেক দামে কেনা – নিজেদের সিনেমা নিয়ে গাফিলতি কেন? কোনরূপ প্রচার প্রচারনা করেনি সিনেমার কারন বাপ্পি-মাহি এখন জাজের বাইরে। তাদেরকে হিট প্রমাণ যাতে না করতে হয়, সেজন্যই জাজ সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় তাদের ব্যানারে কাজ করা দেশের প্রতিটি নায়ক নায়িকার নাম উল্লেখ করলেও একমাত্র বাদ ছিল বাপ্পি মাহি, তাদের সিনেমা অনেক দামে কেনা। সেটা বিষয় না! জাজ ভালো করেই জানে বাপ্পি মাহি জুটির সিনেমায় ফ্লপ খাওয়া পসিবল না। তারপরেও স্বল্প বাজেটের অনেক দামে কেনা? তাই তারা প্রথম সাপ্তাহে ৯১ হলে মুক্তি দিয়ে বাজেট তুলে ২য় সাপ্তাহেই হল কমিয়ে দেয়। তাদের কোন সিনেমাই দুই সাপ্তাহের নিচে চলেনা, কারন হল ভাড়া নিয়ে তারা সিনেমা চালায়।

অপরদিকে ‘চ্যানেল আই’ বিশ্বাস করে কৃষ্ণপক্ষের দায়িত্বটা তুলে দিয়েছিল জাজের হাতে, তারা মীরজাফর রূপে একই সাথে কোলকাতা থেকে আমদানি করেছিলেন কোলকাতার এক অখাদ্য ‘বেপরোয়া’। সিনেমা দুটির দায়িত্ব হাতে নিয়ে কোলকাতার সিনেমাকে প্রাধান্য বেশি দিয়ে দেশের মাটিতেই দেশীয় সিনেমাকে করেছেন অপমানিত।

২০১৭

বিয়ের পর কাজ কমিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মাহি, আসলে কি পেরেছেন? বর্তমান পরিচালকদের শীর্ষ পছন্দের তালিকায় নায়িকা মাহি অন্যতম। প্রায় ডজনখানেক সিনেমার কাজ হাতে নিয়ে মাহি রয়েছেন ইঁদুর-বিড়াল দৌড়ে সবার থেকে এগিয়ে। গোলাপতলির কাজল, ময়না, ঢাকা অ্যাটাক, প্রেমের বাঁধন বড় কিছুর আভাস নিয়ে আসছে, ভক্তদের বাড়তি চাহিদা রয়েছে নক্ষত্রের রাত, সুন্দরী, জান্নাত এর প্রতি। বদি কাকুর বস্তাপচা হলেও সজলের সাথে হারজিৎ, শুভর সাথে তুমি আমার প্রিয়া ব্যবসাসফল হবে, কারন বদি মানেই হিট। এছাড়াও মোশাররফ করিম, সায়মনের সাথে ফালতু এবং কোলকাতার বনি সেনগুপ্তের সাথে ভালবাসার এপিঠ ওপিঠ তো আছেই।

সবমিলিয়ে বলা যায় মাহির হাতে থাকা অর্ধেক সিনেমাও যদি চলতি বছর মুক্তি পায়, তাহলে গত চার বছরের মত এবছরেও রাজত্ব করবে মাহি।
মিডিয়ার শক্তি দিয়ে আর মাহিকে থামানো সম্ভব নয়,চলছে,চলবেই। তাই যারা বলে “মাহি জ্বলে উঠার আগেই নিভে গিয়েছে” তাদের উদ্দেশ্যে আজকের লেখাটি উৎসর্গ করলাম।

(বিঃদ্রঃ ব্লগে এটিই আমার প্রথম লেখা,ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন)


মন্তব্য করুন