Select Page

সুড়ঙ্গ: টানেলের শেষ প্রান্তে আলো আছে কি!

সুড়ঙ্গ: টানেলের শেষ প্রান্তে আলো আছে কি!

দর্শক ‘সুড়ঙ্গ’ দেখতে কেন গিয়েছিল? পারিবারিক দর্শকরা কেন গিয়েছিল? উত্তর একটাই। আফরান নিশোকে দেখতে। নিশোর নাটক, ওয়েব ফিল্ম নাকি সিনেমা দেখতে দর্শক হলে গিয়েছিল?

৩-৪ দৃশ্যে নিশোর অভিনয় দেখে মনে হয়েছে ‘ইয়েস ইটস সিনেমা’। বাকিটা সময় হিংটিংছট। এখানে একটা কথা পরিস্কার করা উচিত বলে মনে করছি। নিশো কোনোভাবেই খারাপ বা মধ্যম মানের অভিনেতা নয়। বরং সে ছোট পর্দার বড় মাপের অভিনেতাদের একজন। তার মাঝে ১০% হুমায়ুন ফরিদি আছে। কিছুদিন যাবৎ দেখা যাচ্ছে সামান্য পরিমাণ মনোজ বাজপায়ীও ভর করেছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে ৬ ইঞ্চি-২২ ইঞ্চি মনিটর আর ৭০-৮০ ফুট পর্দার পার্থক্য আকাশ-পাতাল। ঠিক এ জায়গাটাতেই ৯৫% সময় নির্মাতা নিশোকে ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় আনতে পারেনি।

মানুষ দেখতে গেলো নিশোর সিনেমা আর বেরিয়ে আসলো শহীদুজ্জামান সেলিমের সিনেমা দেখে। এটাকে বলে ওস্তাদের মাইর। এই চরিত্রটির বিল্ডআপ থেকে সেলিমের সফল বাস্তবায়ন সিনেমাটিকে ভরাডুবি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। দীঘি থাকলে ময়না চরিত্রে কেমন করতো জানি না। তবে তমা মির্জা খুব ভালো করেছে।  

স্টোরি টেলিং যথেষ্ট জাম্প করে এগিয়ে গেলেও চিত্রনাট্যের দুর্বলতায় বিরতির আগে সিনেমাটা ঝুলে যায়। আবার বিরতি শেষে গল্প জমে উঠার পরপরই সিনেমাটিকে টানতে টানতে কোমায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সিনেমাটি সিনেমা হয়ে উঠার প্রবল চেষ্টা করে এবং সফল হয় নিশো দেশে ফেরত আসার পর থেকে ব্যাংক ইস্যু আসার আগ পর্যন্ত। এটুকুর বাইরে ইমোশন বলে কিছুই ছিল না। ছিল ছোট পর্দার ফ্রেম আর ছোট পর্দার এডিটিং। চিত্রনাট্যের দুর্বলতার বাইরে দুর্বল ক্যামেরাওয়ার্ক চোখে পড়ার মতো। এছাড়া একটা ডার্ক স্টোরিকে দেখানোর জন্য স্ক্রিনভরা ডার্কনেস সিনেমাটির সৌন্দর্য নষ্ট করেছে, চোখে কষ্ট দিয়েছে। দিনের আলো ব্যবহার করার প্রচুর সুযোগ ছিল।

সিনেমার সেট এবং লোকেশন দুর্দান্ত। একদম গোল্ডেন এ প্লাস। ওয়াইড ফ্রেমগুলো দৃষ্টিনন্দন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঠাসা। ডাবল গোল্ডেন এ প্লাস। তবে খুব কম ক্লোজআপ ব্যবহার হওয়ায় সিনেমার আবেগ, রাগ, ক্রোধ, ভালোবাসা ইত্যাদি আবেদন হারিয়েছে। সিনেমাটির সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। পজেটিভলি ভয়াবহ হয়েছে। ট্রিপল গোল্ডেন এ প্লাস। নিশোর লিপে কোনো গান না রাখাটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় রাখে। মিউজিক ভিডিও আর সস্তা আইটেম গান সিনেমাতে কোসো প্রভাবই রাখে নাই।

ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চে জামাতী হুজুরদের নারী বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সিনেমাটিক ভার্সন ‘সুড়ঙ্গ’। নির্মাতার রাজনৈতিক দর্শন পর্দায় তাদের চিরচেনা পন্থায় মানুষ জবাইকে দেখানো হয়েছে কোন রাখঢাক ছাড়া। নগ্ন সিনেমার প্রয়োজক+নির্মাতাদের অনুকরণে কর্পোরেট আলু-পটলের ব্যবসায়ীরা, যাদের শুধু টাকা দরকার। দায়-দায়িত্ব বলে কিছু নেই, সেই চক্রটা বাংলা সিনেমার প্রতি সাম্প্রতিক সময়ে আগ্রহী হয়ে ওঠা পারিবারিক দর্শকদের মুখ ঢেকে বেরিয়ে যাবার যে আয়োজনটা এই সিনেমার মাধ্যমে করেছে তা নিন্দনীয়।

এবার একটা কাল্পনিক গল্প বলি—

একজন একটা স্ক্রিপ্ট লিখেছে। একটু ডার্ক গল্প, কিছুটা যৌনতা আর গালিগালাজ আছে কাজেই ভালো ওয়েব সিরিজ হবে। প্রযোজক চিন্তা করলো, গতবার এই নির্মাতা নানান নোংরামী (তাদের ভাষায় রাজনীতি) করে একটা হাইপ তুলেছিল। কিছু টাকাও নাকি আয় হয়েছে। যেহেতু ঈদে বড় কোন সিনেমার নাই, কাজেই এবারও একই খেলা খেলে টাকা লুটা যাবে। ভাবলো একা করলে যদি গোছাতে না পানি, তার উপর খরচাও আছে। সাথে নিলো আরেক প্রযোজককে। আর দর্শক ধরতে নিলো ছোট পর্দার সবচেয়ে বড় হিরোকে। এভাবেই একটা ওয়েব সিরিজ হয়ে গেল সিনেমা।

গল্প শেষ।

সর্বশেষ: গল্পটায় নিশো ছাড়া আর কেউ কোনভাবেই মানানসই হতো না। তবে নিশো আরো বড়, আরো জমকালো অভিষেক পেতে পারতো।

নিজের টাকায় টিকিট কেটে সিনেমার দেখি অধিকার নিয়ে দেই তালি বা গালি

*বিএমডিবি ব্লগের সব মতামত লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

নির্মাতা, লেখক ও উদ্যোক্তা .... “নিজের টাকায় টিকিট কেটে সিনেমার দেখি অধিকার নিয়ে দেই তালি বা গালি”

মন্তব্য করুন